নিজস্ব প্রতিবেদন

Oct 12, 2018

মালদাকে অস্ত্র তৈরির হাব বানাতে চায় দুষ্কৃতীরা

Updated: Mar 20, 2023

একদিকে বিহার, আর একদিকে ঝাড়খণ্ড তারপর বিস্তীর্ণ সীমান্ত রয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে৷ এমন ভৌগোলিক অবস্থানে থাকা মালদা এখন অস্ত্র কারবারিদের নিশানায়৷ বাইরে থেকে কিনে এনে নয়, রীতিমতো মালদার বুকের ওপর বসে কারখানা বানিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির ভয়ংকর খেলায় মেতেছে দুষ্কৃতীরা৷ তবে হাত গুটিয়ে বসে নেই পুলিশ৷ সতর্ক নজর রেখেছে বিএসএফও৷ আর সে কারণেই অক্টোবরের শুরুতে দু’দুবার বিপুল পরিমাণ অস্ত্রের হদিস পেয়েছে পুলিশ ও বিএসএফ৷

অক্টোবরের ২ তারিখ কালিয়াচক সীমান্তে বস্তা ভরতি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে বিএসএফ৷ উদ্ধার হয় ৭টি ৭.৬৫ এমএম পিস্তল, ১৫টি কার্তুজ, ১৩টি ম্যাগাজিন৷ বিএসএফের ডিআইজি জর্জ মাঞ্জুরানের দেওয়া তথ্য বলছে, এবছরে এখনো পর্যন্ত ২১টি পিস্তল উদ্ধার করেছে বিএসএফ৷ এর মধ্যে অক্টোবরের প্রথমেই পাওয়া গেল ৭টি পিস্তল৷

এর ঠিক দিন কয়েক পর কালিয়াচকে হদিস মিলল আস্ত অস্ত্র কারখানার৷ গ্রিল ফ্যাক্টরির আড়ালে রমরমিয়ে এই কারবার চলছিল৷

কালিয়াচকের শেরশাহি স্ট্যান্ডের কাছে ফরিদ শেখ নামে এক ব্যক্তির গ্রিল ফ্যাক্টরিতে গোপনে অস্ত্র তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছিল৷ গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ৬ তারিখ পুলিশ ওই কারখানায় হানা দেয়৷ হাতেনাতে ধরে ফেলে তামরেজ শেখ নামে বছর ছাব্বিশের এক যুবককে৷ পুলিশের জালে ধরা পড়ে যায় ছেচল্লিশের সাহাবুদ্দিন ওরফে সাহেবও৷ কালিয়াচকের জনবহুল জায়গায় গ্রিল ফ্যাক্টরির আড়ালে মূলত এই দুইজনই আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির কারিগর ছিল৷ তাদের বাড়ি মুঙ্গেরে৷ ভিনরাজ্য থেকে মালদায় এসে অস্ত্র কারখানা গড়ে কারবার চালানোর ঘটনা অবশ্য এই প্রথম নয়৷ প্রত্যন্ত কোনো এলাকা নয়, খোদ পুরাতন মালদা শহরের মধ্যে অস্ত্র কারখানা ফুলে ফেঁপে উঠেছিল৷ ৩১ মে পুরাতন মালদা শহরের নলডুবি মণ্ডলপাড়ায় অভিযান চালাতে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায় পুলিশের৷ এই এলাকাতেও একটি জনবহুল এলাকার মধ্যে বাড়িভাড়া নিয়ে অস্ত্র কারখানা চলছিল রমরমিয়ে৷ অস্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির বিপুল সরঞ্জামও পায় পুলিশ৷ নলডুবির যে বাড়িতে অস্ত্র কারখানাটি চলছিল, তার মালিক বিহারের বাসিন্দা লক্ষ্মণ সাহা৷ মাস কয়েক আগে আক্রাম নামে ব্যক্তিকে বাড়িটি ভাড়া দিয়েছিল লক্ষ্মণ সাহা৷ এলাকার বাসিন্দারা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি যে পাড়ার মধ্যে অস্ত্রের কারখানা গড়ে উঠেছে৷ আর সেখানে বিহার-ঝাড়খণ্ডের ১০-১২ জনের দুষ্কৃতী দল রীতিমতো ঘাঁটি গেড়ে কারবার চালাচ্ছে৷

পুলিশসূত্রে খবর, নলডুবির বাড়িতে তৈরি অস্ত্র বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হল মুঙ্গেরে৷ আবার কালিয়াচকের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, বস্তায় করে বাংলাদেশে অস্ত্র পাচারের চেষ্টা চলছিল৷ যার সারমর্ম হল মালদাকে কার্যত অস্ত্র তৈরির হাব বানাতে চাইছে আন্তঃরাষ্ট্রীয় অস্ত্র কারবারিরা৷ মূলত ভৌগোলিক অবস্থানের জন্যই মালদাকে বেছে নিয়েছে দুষ্কৃতীরা৷ আরও একটা বিষয় লক্ষণীয় - অস্ত্র কারবারিরা কোনো প্রত্যন্ত এলাকায় নয়, জনবহুল অঞ্চলে কারখানা গড়ে আগ্নেয়াস্ত্র বানাচ্ছে৷ ভাড়াটিয়া সেজে সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশে গিয়ে মারণাস্ত্রের কারবার চালাচ্ছে দুষ্কৃতীরা৷

আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন