মাবুদ সরকার
Feb 2, 2019
Updated: Mar 22, 2023
ছবির শুরুতেই দেখতে পাই পরিচালক দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণের উদ্দেশ্যে এবং ইতিহাসের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য বলিউডের স্বনামধন্য অভিনেতা অমিতাভ বচ্চনের ব্যারিটোন আওয়াজে ইতিহাসের পাতার কয়েক লাইন ঘোষিত করেন। যাকে কেন্দ্র করে এই ছবি, প্রথম দৃশ্যেই দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ‘মণিকর্ণিকা’ অভিনয়ে কঙ্গনা রানাওয়াত।
যেমনি তাঁর তীরের নিশানা তেমনি কোমল তাঁর হৃদয়, দেখেই মুগ্ধ দীক্ষিত ঝাঁসির মন্ত্রী, অভিনয়ে কুলভূষণ খারবান্দা। দূর দৃষ্টি সম্পন্ন দীক্ষিত স্থির করেন আগত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অশুভ দৃষ্টির যথাযথ উত্তর দিতে এবং শীতল প্রকৃতির নরওয়ালকর বংশের মহারাজ গঙ্গাধর রাওয়ের, অভিনয়ে যীশু সেনগুপ্ত, যোগ্য অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে মণিকর্ণিকাই উত্তম। তারপরই প্রস্তাব, বিয়ে, বিয়ের পর নাম বদল করে লক্ষ্মী বাই হয়, গঙ্গাধর এর সঙ্গে মিষ্টি প্রেম, রাজপরিবারের রীতি রেওয়াজ ভেঙে প্রজাদের সঙ্গে একাত্ম হওয়া, তাদের হয়ে ইংরেজদের সঙ্গে বিবাদ করা সবই যেন ইউটোপিয়ান।
ছবির প্রথম অংশের চিত্রনাট্য যেন কিছুটা ধীর গতিসম্পন্ন দর্শকরা যা দেখার জন্য উৎসাহিত, তার আভাস আছে কিন্তু ঝলকানি নেই। যে দামোদরকে জন্ম দিয়ে লক্ষ্মীবাঈ মাতৃসুখে আত্মহারা হন সেই দামোদর কোলচুত্য হওয়াতে কঠোর পাথর হন। ঘরের শত্রু বিভীষণ এর শিকার হয়ে অকালে প্রাণ হারান মহারাজ গঙ্গাধর। শুরু হয় ঝাঁসিতে ইতিহাসের নতুন এক অধ্যায়।স্বামী ও পুত্র শোকে বিলীন হয়ে ধর্মীয় সংস্কার মেনে যখন তাঁর কাশী যাওয়ার কথা তখন লক্ষ্মীবাঈ সমস্ত কিছুকে অমান্য করে মাতৃভূমিকে ফিরিঙ্গিদের হাত থেকে রক্ষা করার তাগিদে গঠন করেন প্রতিরোধ বাহিনী।ইংরেজদের সৈন্যবাহিনীর থেকে ঝাঁসি বাহিনী সংখ্যায় কম দেখে রাজ্যের নারীদের মধ্যে জাগরন ঘটান, তাদের উৎসাহিত করেন, অস্ত্র চালনা ও আত্মরক্ষার শিক্ষা দেন।তাঁর মুখ নয় চোখ কথা বলে। তিনি নারীর মতো নয়, কথা বলেন বীর সেনার মতো। তুমুল লড়াই করেও ঝাঁসিকে ও তার প্রজাদের রক্ষা করতে পারেননি। তার পরেও মাথা নিচু করেননি। পালিত পুত্র দামোদরকে এবং ঝাঁসির একমাত্র উত্তরাধিকারীকে রক্ষা করতে নিজেকে গোপন করেন।ইংরেজদের হুকুমের গোলাম পড়শি রাজ্যের সৈন্যদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত করেন এবং পুনরায় ইংরেজদের উপর আক্রমণ করেন।পৌরাণিক বীর থেকে তিনি কোন অংশে কম নন।যেমন তাঁর তলোয়ার বাজি তেমনি ঘোড়সওয়ারী, লড়তে লড়তে প্রাণ দিলেন কিন্তু ইংরেজদের কাছে মাথা নত করেননি।
‘মণিকর্ণিকা’ ছবিতে কঙ্গনা রানাওয়াত ছবিটি পরিচালনার সঙ্গে সঙ্গে অভিনয় দক্ষতার যে পরিচয় দিয়েছেন এবং নারী শক্তির জাগরণের যে ইতিহাস তুলে ধরেছেন তা শুধু এবার ইতিহাসের পাতায় বন্দি নয়, মানুষের মনের অন্তরালে এক গভীর জায়গা করে নেবে।বর্তমান রাজনীতি অন্য ধারাতে এগিয়ে গেলেও ‘মণিকর্ণিকা’ আবার সাক্ষ্য রেখে গেল ভারতবর্ষ ধর্ম-বর্ণের দেশ নয় এটা ভারতবাসীর দেশ। মণিকর্ণিকার মতো নারীরা যুগে যুগে জন্মেছেন এবং ইতিহাসের পাতায় নিজের কর্মের জোরে জায়গা করে নিয়েছেন।
আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন