শুভাশিস সেন

Aug 3, 2018

কর্মীশূন্য হওয়ায় জেলা গ্রন্থাগারে তালা পড়ার জোগাড়

Updated: Mar 9, 2023

সরকারি অনুমোদিত পদ বারোটি৷ তার মধ্যে আছেন মাত্র তিনজন৷ লাইব্রেরিতে ব্যবহারের জন্য আছে গাড়ি কিন্তু নেই ড্রাইভার৷ বইয়ের সংখ্যা প্রায় এক লক্ষের কাছাকাছি৷ এছাড়া আছে সাতটি বিভিন্ন বিভাগ৷ উপযুক্ত কর্মীর অভাবে বিভিন্ন বিভাগগুলো প্রায় সব সময়ই তালাবন্ধ অবস্থায় পড়ে থাকে৷ গোটা লাইব্রেরির সদস্য ৫ হাজার৷ কিন্তু সমস্ত লাইব্রেরির দায়িত্ব সামলাচ্ছেন মাত্র একজন গ্রন্থাগারিক, একজন দারোয়ান ও একজন নৈশপ্রহরী৷ কর্মী নেই তাই আর নতুন কোনো সদস্যপদ গ্রহণ করা হচ্ছে না৷ আর এইভাবেই ধুকিয়ে চলছে মালদা জেলার অন্যতম জেলা সরকারি লাইব্রেরি৷ আজ এই সংখ্যায় জেলা লাইব্রেরির বর্তমান হালহকিকত নিয়ে আমরা আলোচনা করতে চলেছি৷

স্বাধীনতার পরবর্তীকালে ১৯৫৭ সালে গঠিত এই লাইব্রেরি তৎকালীন জেলাশাসক বিআর সেনের নামে নামাঙ্কিত ছিল৷তখন এই লাইব্রেরির নাম ছিল বিআর সেন পাবলিক লাইব্রেরি ও মিউজিয়াম৷পরবর্তীতে মিউজিয়ামের অংশটিকে আলাদা করা হলে, লাইব্রেরিটির নামকরণ হয় মালদা ডিস্ট্রিক্ট লাইব্রেরি৷


 
এই লাইব্রেরিতে মোট সাতটি বিভাগ আছে এগুলি হল নিউজপেপার রিডিং বিভাগ, সাধারণ ও বিশেষ পুস্তক লেনদেন বিভাগ, শিক্ষার্থী বিভাগ, শিশুবিভাগ, ক্যারিয়ার কাউন্সিলিং, রেফারেন্স পুস্তক বিভাগ ও গবেষণা বিভাগ৷ এর মধ্যে সাধারণ লেনদেন বিভাগ ও বিশেষ লেনদেন বিভাগে যৎসামান্য সিকিউরিটি মানি জমা দিয়ে বই লেনদেন করা হয়ে থাকে এবং অন্যান্য বিভাগগুলির জন্য কোনো টাকা-পয়সা লাগে না৷


 
বর্তমানে মালদা জেলা লাইব্রেরিতে মোট বইয়ের সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষেরও অধিক৷ এর মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার ইংরেজি পুস্তক৷ এছাড়া ৫ হাজার হিন্দি পুস্তকও আছে৷ সংস্কৃত ও পালি ভাষায় লেখা কিছু দুষ্প্রাপ্য বই এখানে সংরক্ষিত আছে৷


 
এই লাইব্রেরির জন্য সরকারি অনুমোদিত সরকারি কর্মচারীর পদ বারোটি৷ তার মধ্যে একজন লাইব্রেরিয়ান, একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট লাইব্রেরিয়ান, দুইজন লাইব্রেরি অ্যাসিস্ট্যান্ট, দুইজন লাইব্রেরি অ্যাটেনডেন্ট, একজন দারোয়ান, একজন নাইট গার্ড, একজন ড্রাইভার, একজন ক্লিনার ও একজন পিয়োন৷ বর্তমানে একজন লাইব্রেরিয়ান, একজন দারোয়ান ও একজন নাইট গার্ড ছাড়া অন্যান্য পদগুলি শূন্য৷ দীর্ঘদিন ধরে এই পদগুলিতে কোনো সরকারি নিয়োগ নেই৷ কিছুদিন আগে অ্যাসিস্ট্যান্ট লাইব্রেরিয়ান অবসর নিয়েছেন ফলে সমগ্র লাইব্রেরি চলছে একজন লাইব্রেরিয়ানের উপর নির্ভর করে৷ রাজ্য সরকার বদল হওয়ার পর বেশকিছু স্থানীয় যুবক-যুবতিকে সামান্য টাকার বিনিময়ে চুক্তিভিত্তিক লাইব্রেরিতে কাজে নিয়োগ করা হয়েছিল কিন্তু কিছুদিন আগে ওপর মহলের সরকারি নির্দেশে তাঁদের সেই কাজ বাতিল করা হয়৷ এর ফলে সমস্যায় পড়েছেন লাইব্রেরির সদস্যরা, বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীরা৷ কারণ তাঁদের সহায়ক পুস্তক লেনদেন করতে খুবই অসুবিধা হচ্ছে৷


 
সদস্যদের এই পুস্তক লেনদেন সংক্রান্ত অসুবিধার কথা স্বীকার করেছেন লাইব্রেরিয়ান শম্ভুনাথ ভট্টাচার্য৷ তিনি জানান, এই বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও শূন্যপদগুলিতে কোনো কর্মী পূরণ করা হয়নি৷ অবশ্য তিনি জানিয়েছেন, যে কোনো বিভাগের পুস্তক লেনদেনের ক্ষেত্রে তিনি একাই সদস্যদের সহায়তা করে থাকেন৷ কিন্তু লোকাল লাইব্রেরি অথরিটির সদস্যরা কিন্তু লাইব্রেরির এই দুর্দশার জন্য লাইব্রেরিয়ানকেই দায়ী করেছেন৷ তাঁদের বক্তব্য, লাইব্রেরিয়ান ব্যক্তিগত কাজে সবসময় ব্যস্ত থাকেন, তাই কোনোদিনও ঠিক সময়মতো লাইব্রেরি খোলেন না৷ এর জন্যই পাঠক ও সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে না৷ যদিও বর্তমান শাসকদল সমর্থিত লোকাল লাইব্রেরি অথরিটি শূন্যপদগুলি পূরণের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকার বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন৷ এদিকে লাইব্রেরির কর্মীর অভাবে সমগ্র লাইব্রেরির বেহাল দশা৷ ঘরগুলির এখানে ওখানে নোংরা, ছাদ থেকে মাকড়সার জাল ঝুলে আছে, আলমারিগুলিতে বইগুলি অবিন্যস্ত অবস্থায় পড়ে আছে৷ প্রতিটি বিভাগে কম্পিউটার থাকলেও উপযুক্ত কর্মীর অভাবে তা ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়ে আছে৷ দীর্ঘদিন যাবৎ লাইব্রেরির ড্রাইভার ও ক্লিনার পদ দুটিও শূন্য৷ ফলে লাইব্রেরির দক্ষিণ দিকে গ্যারেজের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে অব্যবহারযোগ্য জিপ গাড়িটি৷


 
প্রসঙ্গত বলা যেতে পারে যে, গত ২০০৫ সালে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা রাজা রামমোহন রায় ফাউন্ডেশন-এর বিচারে ভারতবর্ষের সর্বশ্রেষ্ঠ লাইব্রেরির শিরোপা পেয়েছিল মালদা জেলা লাইব্রেরি এবং ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারও লাভ করেছিল এই লাইব্রেরি৷ কিন্তু বর্তমানে লাইব্রেরি করুণদশায়৷ ক্ষুব্ধ মালদা জেলার সকল পুস্তকপ্রেমী মানুষেরা৷ এই প্রসঙ্গে জেলার লাইব্রেরি অফিসার মনঞ্জয় রায় জানান, কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়ে তাঁর কোনো ক্ষমতা নেই৷ সরকারিভাবে এই কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া হয়৷ তিনি স্বীকার করেন যে, উপযুক্ত কর্মী না থাকার জন্য বর্তমানে লাইব্রেরির পরিসেবা ঠিকমতো দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না৷ এই সমস্যা শুধুমাত্র জেলা লাইব্রেরির ক্ষেত্রে একক সমস্যা নয়, জেলার অন্যান্য পাবলিক লাইব্রেরিগুলিতেও একই ধরনের সমস্যা আছে বলে মন্তব্য করেছেন মনঞ্জয়বাবু৷

আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন