নিজস্ব প্রতিবেদন

Aug 17, 2019

কেন্দ্রের ভরসায় একফালি চাঁদ জেলার রসালো আমে

আম-রেশমের জেলা মালদা৷এই দুই ফসলের জন্য গর্বে বুক ভরে ওঠে জেলাবাসীর৷কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে সেই গর্বে হাতুড়ির আঘাত হানছে সরকারি উদাসীনতা৷বিপদে পড়ছেন জেলার আমচাষি থেকে শুরু করে ফল ব্যবসায়ীরাও৷নিজেদের নীতিতে গত কয়েক বছর ধরে মালদার আম আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বাংলাদেশ সরকার৷ফলে জেলার আম আর বিদেশের মাটি ছুঁতে পারছে না৷মালদার আম সরাসরি যাচ্ছে না ইউরোপের কোনো দেশেও৷কারণ, বছর তিনেক ধরে বন্ধ জেলার একমাত্র সরকারি প্যাক হাউস৷তাই এবার গোটা জেলায় সাড়ে ৩ লক্ষ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হলেও তার একটা সিংহভাগ অংশ গেছে গোরু-ছাগলের পেটেই৷

বিদেশে ফল ও সবজি রপ্তানিতে সবুজ সংকেত

তবে সম্প্রতি আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের জন্য খুশির বার্তা এনেছে কেন্দ্রীয় সরকার৷সেই ফের জেগে উঠতে চলেছে জেলার একমাত্র সরকারি প্যাক হাউসটি৷কেন্দ্রীয় সরকার এই প্যাক হাউস থেকে বিদেশে ফল ও সবজি রপ্তানির সবুজ সংকেত দিয়েছে৷এই সিদ্ধান্তে উচ্ছ্বসিত জেলার বণিকসভা৷এতে জেলার আমচাষি থেকে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন বলে আশা করছেন জেলার বিজেপি সাংসদও৷

মালদার আমকে দেশের অন্যান্য জায়গার সঙ্গে বিদেশে রপ্তানিযোগ্য করতে ২০০৪ সালে শহরের কৃষ্ণকালীতলা এলাকায় সরকারি প্যাক হাউস চালু করা হয়। কেন্দ্রীয় সংস্থা অ্যাপেডার সহযোগিতায় প্যাক হাউসটি তৈরি করেছিল রাজ্য উদ্যানপালন ও খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ নিগম লিমিটেড।

সেই বছরের ১৬ অক্টোবর এই সরকারি প্যাক হাউসের উদ্বোধন করেন রাজ্যের তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন৷উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন রাজ্যের তৎকালীন উদ্যানপালন ও খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী শৈলেন সরকার এবং সাংসদ বরকত গণি খান চৌধুরি৷প্যাক হাউসটি চালু হওয়ায় মুখে হাসি ফোটে জেলার আমচাষিদের৷প্রথম ক’বছর এখান থেকে হিট ট্রিটমেন্টের পর জেলার আম বিদেশেও গিয়েছিল৷কিন্তু সরকারি উদাসীনতায় এখন সেটা পরিণত হয়েছে সাপের আস্তানায়৷

কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণা প্রসঙ্গে জেলার বণিকসভা, মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্সের সম্পাদক জয়ন্ত কুণ্ডু বলেন, মালদা প্যাক হাউসটি গত ২-৩ বছর ধরে বন্ধ৷সাম্প্রতিক বাজেটে কেন্দ্রীয় সরকার দেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিদেশে রপ্তানিতে জোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়৷এবার কেন্দ্র মালদা প্যাক হাউস থেকেও বিদেশে ফল ও সবজি রপ্তানিতে সবুজ সংকেত দিয়েছে৷এর জন্য তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন৷এই প্যাক হাউস পুনরুজ্জীবিত হলে আগামীতে মালদায় আরও নতুন প্যাক হাউস তৈরি হবে৷জেলা থেকে ফল ও সবজি বিদেশে রপ্তানি করা হলে সবচেয়ে লাভ হবে মালদার কৃষকদের৷মালদায় আম ও লিচু প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হলেও লিচু সংরক্ষণ করা যায় না৷তবে আমের ক্ষেত্রে এই প্যাক হাউস ভীষণ কাজে লাগবে৷এখান থেকে আম বিদেশে রপ্তানি হলে জেলার রপ্তানিকারকরাও উপকৃত হবেন৷

জেলার বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ এখন সবচেয়ে বেশি যে কাজে মনোনিবেশ করেছেন, তা হল, আর্থসামাজিক দিক থেকে দেশের প্রত্যেকটি মানুষকে স্বনির্ভর করা৷ভারতবর্ষ কৃষিপ্রধান৷তাই কৃষিতেই বিশেষ জোর দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার৷রপ্তানিযোগ্য ফসল যাতে বিদেশে পাঠানো যায় তার জন্য জোর দেওয়া হচ্ছে৷মালদার ফুড পার্ক নিয়ে তিনি নিজে কেন্দ্রীয় উদ্যানপালন ও খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন৷রাজ্য সরকার এই প্যাক হাউস নিয়ে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না৷শুধু মুখে তারা কৃষকদের পাশে থাকার দাবি করে৷জেলার একমাত্র প্যাক হাউস থেকে ফল ও সবজি বিদেশে রপ্তানির সবুজ সংকেত দেওয়ার জন্য তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন৷এখান থেকে ফল বিদেশে রপ্তানি হলে জেলার আর্থসামাজিক পরিস্থিতিটাই বদলে যাবে৷

ছবিঃ চন্দন কর্মকার