আমাদের মালদা ডিজিট্যাল

Sep 26, 2020

মেয়েদের বিয়ের বয়স ২১! মানতে নারাজ সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকার অভিভাবকরা

স্বাধীনতা দিবসে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইঙ্গিত দিয়েছেন, মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স বাড়তে পারে৷ সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সরকার এবার ১৮ বছরের পরিবর্তে মেয়েদের বিয়ের বয়স ২১ বছর করার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে৷ যদি এমনটাই হয়, তবে মালদার মতো সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকার অভিভাবকরা কেন্দ্রীর সরকারের এই সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।

বর্তমান আইন অনুযায়ী ১৮ বছরের আগে কোনো মেয়ের বিয়ে দেওয়া অপরাধ৷ ১৯৭৮ সালে তদানীন্তন সরকার শারদা অ্যাক্টে বদল ঘটিয়ে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর করে। তবে মালদা জেলাতে ১৮ তো দূরের কথা অনেক সময় আরও কয়েকবছর নীচে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। গ্রামাঞ্চলের পাশাপাশি শহরাঞ্চলেও এই ঘটনা ঘটছে। পুলিশের নাবালিকা বিয়ে রোধ এই ঘটনার প্রমাণ। মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়ার কারণ অশিক্ষা ও দারিদ্রটা, এমনটাই মনে করছে জেলার একাংশ। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার যদি মেয়ের বিয়ের বয়স বাড়িয়ে দেয় তবে মালদার মতো সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় তার কি প্রভাব পড়বে তা জানতে আমাদের মালদার প্রতিনিধি বিভিন্ন গ্রামে পৌঁছেছে।

ইংরেজবাজারের সাতঘরিয়া গ্রামের এক মহিলা বলেন, ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী মেয়েরা ১৬ বছরেই যুবতি৷ মেয়ের বয়স ১৬ হলে তার বিয়ে দেওয়া বাবা-মায়ের কর্তব্য৷ তবে বর্তমান ভারতীয় আইন বলছে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ বছর। এবার শুনতে পাচ্ছি, কেন্দ্রীয় সরকার মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স বাড়িয়ে ২১ করতে চলেছে। যদি এমনটা হয় তবে তা আমাদের ইসলাম ধর্মের বিরোধী। কোতোয়ালি গ্রামের এক অভিভাবক বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিটা ভিন্ন। এখন হয়তো মেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে পারে। কিংবা বেশিদিন মেয়েকে বাড়িতে রাখলে কিছু দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। মেয়েদের ১৮ বছর পর্যন্ত ঘরে রাখাটাই সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। একই বক্তব্য যদুপুর ২ গ্রামপঞ্চায়েতের অভিভাবকদেরও।

ওই এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান সাজ্জাদ আলি জানান, ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত মেয়েদের ঘরে রাখলে গরিব মানুষকে নানাবিধ সমস্যায় পড়তে হয়৷ এই বয়সসীমাকে বাড়িয়ে ২১ করা হলে সেটা তাদের কাছে আরও বোঝা হয়ে দাঁড়াবে৷ পাশাপাশি বর্ডার এলাকায় মেয়েদের সুরক্ষা নিয়েও চিন্তা থাকবে পরিবারের লোকদের।

দেশে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিয়েতে ১৮ বছরের নির্ধারিত ন্যূনতম বয়স বেশ কিছুদিন ধরেই পুনর্বিবেচনা করার দাবি উঠেছে। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রক ঘোষণা করেছে, একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে এই বিষয়টি বিচার বিবেচনা করার জন্য। নীতি আয়োগ রয়েছে এই টাস্ক ফোর্সের মাথায়। ১০ সদস্যের একটি টিম সারা দেশজুড়ে গবেষণা শুরু করছে মেয়েদের বিয়ের বয়স এই বিষয়ে। কিন্তু যদি একলাফে মেয়েদের বিয়ের বয়স তিন বছর বাড়িয়ে দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারগুলির ওপর চাপ বাড়বে কিনা? মালদার মতো সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলায় কিন্তু সে সন্দেহ থাকছে।

আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন