আমাদের মালদা ডিজিট্যাল

Nov 3, 2018

মেয়ের শ্লীলতাহানির প্রতিবাদ করে খেসারত দিচ্ছে পরিবার

Updated: Mar 20, 2023

নাবালিকা মেয়ের শ্লীলতাহানির প্রতিবাদ করেছিলেন মা। তারই খেসারত দিতে হচ্ছে গোটা পরিবারকে। পরিবারের সকলে এখন বাড়ি ছাড়া। তাঁরা গ্রেফতারি ও প্রাণে বাঁচতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন মালদা শহরের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত।

নির্যাতিতা মেয়েটির মা, মহিলা ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল সার্ভিসের প্যারা লিগ্যাল ভলান্টিয়ার৷ মালদা জেলা সংশোধনাগারে কর্মরত৷ স্বামী ও একমাত্র মেয়ে নিয়ে ভাড়া থাকেন ইংরেজবাজার পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে৷ ১০ বছরের মেয়ে স্থানীয় একটি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে৷
 

 

 
গত ২৩ অক্টোবর তাঁদের মেয়ে সকালে গিয়েছিল নাচের ক্লাসে৷ ক্লাস শেষে বাড়ি ফেরার পথে এক মুদির দোকানের মালিক, স্বপন সরকার তাকে ডাকেন৷ স্বপনবাবুর বয়স ৬০। কেন ওই কিশোরী এখন আর দোকানে আসে না, তা তিনি জানতে চান৷ অভিযোগ, সেই সময় চকোলেট ও বিস্কুটের লোভ দেখিয়ে কিশোরীর শ্লীলতাহানি করেন স্বপনবাবু৷ কিশোরীকে নাকি তিনি ধর্ষণের চেষ্টাও করেন৷ কোনওরকমে কিশোরী সেখান থেকে পালিয়ে নিজের বাড়ি গিয়ে মা’কে সমস্ত ঘটনা জানায়।

কিশোরীর মা বলেন, মেয়ের মুখে সমস্ত ঘটনা শুনে তিনি উত্তেজিত হয়ে ওঠেন৷ স্বপনবাবুর কাছে গোটা ঘটনার কৈফিয়ত চান৷ স্বপনবাবু প্রথমে গোটা ঘটনা অস্বীকার করেন৷ উলটে তিনি তাঁর নাবালিকা মেয়েকে কটু কথা বলতে থাকেন৷ সেই সময় রাগে তিনি স্বপনবাবুকে দু’এক চড় কষিয়ে দেন৷ এই বাদানুবাদের মধ্যে সেখানে ভিড় জমে যায়৷ সবার চাপে স্বপনবাবু নিজের কৃতকর্মের কথা স্বীকার করেন৷ তখনই উত্তেজিত জনতা তাঁকে মারধর করতে শুরু করে৷ স্বপনবাবু প্রকাশ্যে কান ধরে উঠবস করেন৷ পরিস্থিতি ঘোরালো হচ্ছে দেখে তিনি মেয়েকে বাড়িতে রেখে নিজের কাজে সংশোধনাগারে চলে যান৷ জেল সুপারকেও তিনি সব কথা খুলে বলেন৷ সুপার তাঁকে থানায় অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দেন৷ তিনি ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাকলি চৌধুরিকে সঙ্গে নিয়ে থানায় যান৷ গোটা ঘটনা জানিয়ে ইংরেজবাজার থানায় স্বপনবাবুর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন৷

নির্যাতিতার মা আরও বলেন, থানায় অভিযোগ জানিয়ে বেরিয়ে আসার সময় তাঁরা খবর পান, স্বপনবাবুকে তখনও মারধর করা হচ্ছে৷ সেকথা শুনে কাকলীদেবীর সঙ্গে তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে যান৷ উত্তেজিত জনতার হাত থেকে উদ্ধার করে কাকলিদেবী, আহত স্বপনবাবুকে নিজের কয়েকজন কর্মী সহ মালদা মেডিকেল কলেজে পাঠান৷ এর পরের দিন থেকেই তাঁকে ক্রমাগত অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া শুরু হয়৷ কখনও ফোনে, কখনও বা প্রকাশ্যে। তাঁকে বাড়িছাড়া করা, এমনকি খুনের হুমকিও দেওয়া হয়৷ স্বপনবাবুর ছেলে সুমন সরকার প্রকাশ্যেই তাঁকে এবং তাঁর মেয়েকে পুড়িয়ে মারার হুমকি দেন৷ কিন্তু এসব করেও তাঁকে ভয় দেখানো যায় নি৷ তিনি নিজের অভিযোগপত্র প্রত্যাহার করেননি৷ তাঁর উপর রাজনৈতিক চাপ আসলেও তিনি তা গ্রাহ্য করেননি৷ শেষ পর্যন্ত ২৯ অক্টোবর তাঁরা জানতে পারেন, সেদিনই ইংরেজবাজার থানায় তাঁদের বিরুদ্ধে স্বপনবাবুকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা৷ সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তাঁদের পরিবারের ৬ জনের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজুও করেছে৷ এরই মধ্যে ৩০ অক্টোবর জেলা আদালতে তাঁর মেয়ে বিচারকের সামনে নিজের জবানবন্দি দিয়েছে৷ এরপর থেকেই তাঁরা আতঙ্কে বাড়িছাড়া৷ নিজে কিংবা তাঁর স্বামী কাজে যেতে পারছেন না৷ মেয়ের স্কুল বন্ধ থাকলেও তার পড়াশোনা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷ তবে যাই হোক, যে তাঁর মেয়ের এমন ক্ষতি করেছে তিনি তার শাস্তি চান৷

আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

প্রতীকী ছবি। সৌজন্যে পিক্স অ্যাবে।