আমাদের মালদা ডিজিট্যাল

Nov 29, 2021

চিন্তা বাড়াচ্ছে করোনার নতুন স্ট্রেন, টিকাকরণে জোর স্বাস্থ্যদপ্তরের

ওমিক্রণ। এতদিনে এর নাম জেনে গিয়েছে সাত থেকে সত্তর। আফ্রিকায় উৎপত্তি করোনার নয়া স্ট্রেন। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই ভ্যারিয়েন্ট অনেক বেশি শক্তিশালী। নীরব ঘাতক। এই স্ট্রেনে আক্রান্ত হলে জ্বর, গলা ব্যথা, সর্দি-কাশি প্রভৃতি লক্ষণ নাও দেখা যেতে পারে। শুধু খিদে কমে যাওয়া ছাড়া কোনও লক্ষ্মণ থাকবে না। কখনও সেটাও আক্রান্তের থাকবে না। ফলে প্রাথমিকভাবে বোঝাই যাবে না, কেউ ওমিক্রণ ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। কিন্তু এই স্ট্রেন দ্রুত মানব শরীরে কাজ করতে শুরু করে। চিকিৎসার তেমন সময় পাওয়া যায় না। তাই করোনার এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে আশঙ্কায় কাঁপছে সারা বিশ্ব। চিন্তিত ভারতও। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিটি রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব প্রতিটি মানুষকে টিকাকরণের আওতায় আনতে হবে। সেই নির্দেশ পেয়ে এরাজ্যের সরকারও টিকাকরণে গতি আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাতিল করা হয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীদের রবিবাসরীয় ছুটি। আর তাতেই বেঁকে বসেছেন জেলার উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে কর্মরত এএনএম ও আশাকর্মীরা। তাঁরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, রবিবার তাঁরা কাজ করবেন না। কিছুতেই। এর ফলে জেলায় করোনা টিকাকরণ ব্যহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর, এই জেলায় ভোটার তালিকায় থাকা ২৯ লক্ষ ৫৩ হাজার ৩০৮ জনের মধ্যে এখনও পর্যন্ত ২৩ লক্ষ ৭৬ হাজার ২০৯ জনকে করোনা টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। এখনও প্রথম ডোজের বাইরে রয়েছেন ৫ লক্ষ ৭৭ হাজার ১০৫ জন। অন্যদিকে টিকার দুটি ডোজ পেয়েছেন মাত্র ৭ লক্ষ ৫৪ হাজার ৮২২ জন। অর্থাৎ এখনও প্রায় ৭৫ শতাংশ জেলাবাসী দুই ডোজ টিকার বাইরে রয়েছেন। এর মধ্যে টিকা নেওয়ায় মানুষের অনীহা কপালের ভাঁজ আরও বাড়িয়েছে স্বাস্থ্যকর্তাদের।

জেলার প্রতিটি মানুষকে টিকাকরণের আওতায় আনতে মূলত এএনএম ও আশাকর্মীদের উপরেই ভরসা করছে স্বাস্থ্য দপ্তর। সেকারণেই রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এখন আর সোম থেকে শনি নয়, রবিবারও মানুষ টিকা পাবেন। জেলার প্রায় ৪৫০ উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেই টিকা দেওয়া হবে। বাড়ি বাড়ি ঘুরে মানুষকে টিকাকরণ কেন্দ্রে নিয়ে আসবেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। যেহেতু রবিবার প্রায় সবাই বাড়িতে থাকেন, তাই সেই দিনটির উপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে রাজ্য সরকার।

প্রতীকী ছবি।

কিন্তু রবিবার কাজ করতে নারাজ এএনএম ও আশাকর্মীরা। এই স্বাস্থ্যকর্মীদের সংগঠনের জেলা সম্পাদক অসীমা পাল জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা মূলত মা ও শিশুদের সুরক্ষার দিকটি দেখার জন্য চাকরি পেয়েছেন। অন্য কিছু দেখা তাঁদের কাজ নয়। তবু করোনাকালে তাঁরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনা আক্রান্তদের পরিষেবা দিয়েছেন। মানুষকে টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। এমনকি তাঁদের টিকাকরণ কেন্দ্র পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। এর মধ্যে গর্ভবতী ও প্রসূতিরাও রয়েছেন। কিন্তু তাঁরাও মানুষ। তাঁদেরও পরিবার, সংসার রয়েছে। তাঁদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টিও সরকারকে ভাবতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা নিজেদের স্বার্থে একাধিক দাবি জানিয়ে আসলেও সরকার তাঁদের দিকে ফিরে তাকায়নি। অথচ এখন তাঁদের রবিবারের ছুটি কেটে নিয়ে সরকার তাঁদের মানসিকভাবে অসুস্থ করে দিতে চাইছে। তাঁরা রবিবার কাজ করতে ইচ্ছুক নন।

[ আরও খবরঃ বাল্যবিবাহ রোধে বিশেষ কর্মসূচি পুরাতন মালদায় ]

যদিও জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, সরকারি নির্দেশ সবাইকে মেনে চলতে হবে। তাঁরাও রবিবার কাজ করছেন। টিকা নিতে মানুষের আগ্রহ কমছে। এই মানুষদের টিকার আওতায় নিয়ে আসার জন্যই এই সিদ্ধান্ত। অল্প দিনের জন্য রবিবার টিকাকরণ ক্যাম্প করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সবাইকে বিষয়টি বোঝা উচিত।

আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন