নিজস্ব প্রতিবেদন

Nov 30, 2017

ব্যাংক কিংবা বাজার, কয়েন দেখলেই বেজার

নরেন্দ্র মোদীর নোটবন্দির বয়স পেরিয়ে গিয়েছে এক বছর৷ এর মধ্যেই দেশ জুড়ে লাগু হয়েছে গুডস্ অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স৷ সাদা কথায় জিএসটি৷ সাধারণ মানুষের অবোধ্য৷ কিন্তু আমআদমির কাছে যা বোধ্য, তা হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের লাগামছাড়া বৃদ্ধি আর খুচরোর ভয়ংকর সমস্যা৷ এই দুইয়ের দাপটে নাজেহাল সবাই৷

কিন্তু তাতে সাধারণ মানুষ যে ভয়াবহ সমস্যায় পড়েছিল, তা নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই৷ প্রথমে ব্যাংকের দীর্ঘ লাইন দিয়ে বড়ো নোট ভাঙাতে হয়েছে সবাইকে৷ ব্যাংক থেকে সবার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে খুচরো কয়েনের থলি৷ তা প্রত্যেককে নিতেই হবে বলে কার্যত ফতোয়া জারি করে দিয়েছে ব্যাংকগুলি৷ এতেই দেখা দিয়েছে সমস্যা৷ বাজারে ঢুকে গিয়েছে কোটি কোটি টাকার কয়েন৷ এই মুহূর্তে রিজার্ভ ব্যাংক প্রচুর পরিমাণে নতুন নোট বাজারে ছেড়েছে৷ তা এখনো পর্যাপ্ত না হলেও নোট সমস্যা মিটেছে অনেকটাই৷ একই সঙ্গে বাজারে থেকে গিয়েছে কয়েনও৷ এই কয়েন নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার কথার লড়াই এখন নিত্যদিনের৷

বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে নতুন নোট না ছেড়ে মোদীর নোটবন্দির ঘোষণা করা কতটা যুক্তিযুক্ত ছিল, তা নিয়ে এখনও রয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর৷

মালদা জেলা প্রশাসনিক ভবনের সামনে চায়ের দোকান রয়েছে বীরেন হালদারের৷ দিনে একশো কাপেরও বেশি চা বিক্রি করেন তিনি৷ ৪/৫ টাকা প্রতি কাপ৷ বীরেনবাবুর বক্তব্য, তাঁর ব্যবসা মূলত কয়েনের উপরেই চলে৷ কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়৷ তিনি কয়েনে ব্যবসা চালালেও বড়ো ব্যবসায়ীরা তা নিতে রাজি নন৷ ব্যাংক ও কয়েন নিতে রাজি হচ্ছে না৷ এভাবেই তাঁর কাছে জমে গিয়েছে কয়েক হাজার টাকার কয়েন৷ সেসব কী করবেন, ভেবে পাচ্ছেন না৷ একই পরিস্থিতি নেতাজি মার্কেটের সবজি ব্যবসায়ী সমীর দাসের৷ তিনি জানাচ্ছেন, ক্রেতারা সবজি কিনে কয়েন ধরাচ্ছেন৷ ব্যবসার তাগিদে সেই কয়েন নিতে বাধ্য হচ্ছেন তিনি৷ কিন্তু ক্রেতাদের যখন কয়েন দিচ্ছেন, তখন তাঁরা আর নিতে চাইছেন না৷ এমনকি ৫ টাকার কয়েন নিতেও ক্রেতাদের অনীহা৷ কিন্তু তাঁরা এত নোট কোথায় পাবেন? এনিয়েই ক্রেতাদের সঙ্গে তাঁদের বচসা শুরু হচ্ছে৷

নারায়ণ কুণ্ডু মুদিখানার পাইকারি ব্যবসায়ী৷ তাঁর বক্তব্য, এই মুহূর্তে তাঁর কাছে প্রায় ৩ লক্ষ টাকার কয়েন রয়েছে৷ রিজার্ভ ব্যাংক নির্দেশ দিলেও ব্যাংকগুলি এখনও কয়েন জমা নিচ্ছে না৷ এই অবস্থায় তিনি কী করবেন? তাই কয়েনের মাধ্যমে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি৷ তবুও ব্যবসার তাগিদে প্রতিদিন কিছু কয়েন তাঁকে নিতেই হয়৷ শুধু তিনি নন, একই অবস্থা জেলার অন্যান্য পাইকারি ব্যবসায়ীদেরও৷

এই সমস্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন জেলার বণিকসভা, মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্সের সম্পাদক উজ্জ্বল সাহাও৷ তিনি বলেন, কয়েন এখন ব্যবসার ক্ষেত্রে ক্যান্সারের আকার নিয়েছে৷ এর মূল প্রভাব পড়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উপর৷ এই মুহূর্তে একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কাছে এক লক্ষ টাকা মজুত থাকলে তার মধ্যে ৬০ হাজার টাকাই কয়েন৷ বাজারে কয়েনের বিপুল উপস্থিতির কারণ গ্রামীণ মহিলারাও৷ তাঁরা বাড়িতে মূলত কয়েন জমান৷ নোটবন্দির পর সেই জমানো কয়েন তাঁরা বাজারে নিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন৷ এভাবেই বাজারে কোটি কোটি টাকার কয়েন চলে এসেছে৷ সমস্যা আরও বাড়িয়েছে ব্যাংকগুলি৷ মুখে বললেও তারা কয়েন জমা নিচ্ছে না৷ এনিয়ে জেলাশাসককে তাঁরা একবার ডেপুটেশনও দেন৷ দুর্ভাগ্যের বিষয়, তাতে কোনো কাজ হয়নি৷ তাঁরা ফের এই সমস্যা সমাধানে জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করবেন৷ সমস্যা সমাধানে প্রশাসনিকভাবে যাতে ডিস্ট্রিক্ট লেভেল ব্যাংক কমিটিতে আলোচনা হয়, তার আর্জি জানাবেন৷ তবে সেই বৈঠকে ব্যবসায়ীদেরও রাখতে হবে৷ তা না হলে সমস্যার সমাধান হবে না৷ উজ্জ্বলবাবু পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, কয়েন সমস্যায় জেলার অর্থনীতি ভাঙতে বসেছে৷ এনিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আরো ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হবে৷

আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন