আমাদের মালদা ডিজিট্যাল

Apr 1, 2023

নির্যাতিতার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে বাধা, ক্ষুব্ধ শিশু সুরক্ষা কমিশন

গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। ঘটনার পর কে কতবার ওই নির্যাতিতার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছেন, জানা নেই। কে কীভাবে ওই নির্যাতিতার পাশে দাঁড়িয়েছেন জানা নেই। তবে শনিবার ওই নির্যাতিতার দখল নিয়ে রাজ্য ও জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের দ্বন্দ্বের সাক্ষী থাকল গ্রামবাসী। বাধা পেয়ে জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশন ফিরে যেতে চাইলে, গ্রামবাসীরা তাঁদের নির্যাতিতা ছাত্রীর সঙ্গে দেখা করে যাওয়ার অনুরোধ করেন। গ্রামবাসীরা পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে জাতীয় প্রতিনিধি দলকে নির্যাতিতার বাড়িতে নিয়ে যান। ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেখা গিয়েছে রাজনৈতিক উত্তেজনাও।

নির্যাতিতার বাড়িতে জুতো হাতে তৃণমূল নেত্রী। সংবাদচিত্র।

রাজ্য সরকারকে আগাম খবর দিয়েই গতকাল রাজ্যে এসেছে জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের তদন্তকারী দল৷ দলে রয়েছেন কমিশনের চেয়ারম্যান প্রিয়াঙ্ক কানুনগো, মেম্বার সেক্রেটারি রূপালি ব্যানার্জি৷ তাঁরা আজ গাজোলে ক্লাসরুমে গণধর্ষণের শিকার হওয়া ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীর বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাঁদের বাধা দেয় পুলিশ৷ জাতীয় প্রতিনিধি দলকে জানানো হয়, ঘরের ভিতরে রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন সহ অন্য সদস্যরা রয়েছেন৷ তাই তাঁরা ভেতরে যেতে পারবেন না। রাজ্য সরকারকে আগাম খবর দিয়ে তদন্ত করতে এসে এভাবে বাধা পেয়ে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন জাতীয় কমিশনের সদস্যরা। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর তাঁরা সেখান থেকে চলে যেতে চান। সেই সময় গ্রামবাসীরা জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের প্রতিনিধিদের নির্যাতিতার সঙ্গে দেখা করে যাওয়ার অনুরোধ করেন। পরে এলাকাবাসীরা পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে নির্যাতিতার ঘরে নিয়ে যান জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের প্রতিনিধি দলকে। সেখানেও দুই কমিশনের মধ্যে বিবাদ বেঁধে যায়।

প্রিয়াঙ্ক কানুনগো বলেন, রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন উর্দিধারী পুলিশকর্মীদের নিয়ে নির্যাতিতার ঘরে ঢুকে বসে রয়েছেন৷ পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে গেলে এটা করা যায় না৷ রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন নির্যাতিতা কিংবা তার পরিবারের সঙ্গে আমাদের কথা বলতে দিচ্ছেন না৷ রাজ্য সরকারের গাফিলতি যাতে প্রকাশ্যে না আসে, তার জন্যই তিনি সেই চেষ্টা করছেন৷

রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায় জানান, এই ঘটনার তদন্ত কোন পর্যায়ে রয়েছে, তা দেখতে আজ আমরা এখানে এসেছি৷ পরে জাতীয় কমিশনের সদস্যরা এখানে আসেন৷ আমি তাঁদের কাজে কোনও বাধা দিইনি৷ জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সনের দাবি, তাঁরা তদন্ত করার সময় কেউ সেখানে থাকতে পারবে না৷ কিন্তু তিনি নিজেই বিজেপির বিধায়ককে নিয়ে বাচ্চাটির ঘরে ঢুকেছিলেন৷ আইন অনুযায়ী, আমরা কোথাও তদন্ত করার সময় জাতীয় কমিশনের প্রতিনিধিদেরও সেখানে ঢোকার কোনও এক্তিয়ার নেই৷

বিজেপি বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরি জানান,

এই ঘটনা নিয়ে আমিই প্রথমে জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছিলাম৷ শিশু সুরক্ষা আইন বলছে, তদন্তের সময় অভিযোগকারী কমিশনের সঙ্গে থাকতে পারে৷ রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন বোধহয় নিয়ম ঠিকমতো বোঝেন না৷ তাঁরা তো আজ জাতীয় কমিশনকে নির্যাতিতার সঙ্গে কথাই বলতে দিচ্ছিলেন না৷ শেষ পর্যন্ত গ্রামবাসীদের জন্য নির্যাতিতা ও তার পরিবার জাতীয় কমিশনের সঙ্গে কথা বলতে পারে৷ এমনকি জাতীয় কমিশনকে বাধা দিতে গিয়ে এখানকার এক নেত্রীর নেতৃত্বে তৃণমূলের লোকজন নির্যাতিতার বাড়িতেই ভাঙচুর চালিয়েছে৷

গাজোল ব্লক মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী তথা জেলাপরিষদ সদস্য সাগরিকা সরকার বলেন,

ঘটনাটি ঘটার পরেই পুলিশ তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে৷ সঠিক তদন্তও করছে৷ সেই তদন্ত খতিয়ে দেখতেই আজ রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন এসেছিলেন৷ রাজ্য কমিশন বলেছিল, প্রয়োজনে জাতীয় কমিশন নির্যাতিতার সঙ্গে কথা বলতে পারে৷ তবে কোনও রাজনৈতিক লোকজনকে নিয়ে বাচ্চাটির ঘরে ঢোকা যাবে না৷ সেই সময় বিজেপির মহিলারা আমাকে ধাক্কাধাক্কি করে। আত্মরক্ষায় আমি জুতো হাতে তুলে নিয়েছিলাম।

আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন