নিজস্ব প্রতিবেদন

Apr 7, 2023

১২ বছর বয়সে মহাকাশ বিশেষজ্ঞ হয়ে সাড়া ফেলেছে বাঙালি খুদে

বয়স ১২ বছর৷ সবে ক্লাস সেভেনে উঠেছে৷ কিন্তু এখনই সে মহাকাশ বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছে৷ এই বয়সেই ঘরে বসে গ্রহাণু, নক্ষত্রপুঞ্জ ও সুপারনোভা শনাক্তকরণে সাফল্য পেয়েছে সে৷ খুদে শৌর্য এখন নাসা কিংবা ইসরোর মহাকাশ বিজ্ঞানীদের কাছে পরিচিত নাম৷

বড়ো হয়ে অ্যাস্ট্রোফিজিক্স নিয়ে পড়তে চায় শৌর্য পাল

একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ছাত্র শৌর্য পালের বাড়ি মালদা শহরের রিজেন্ট পার্কে৷ বাবা শুভেন্দু পাল ও মা অর্পিতা পাল দু’জনেই প্রাথমিক শিক্ষক৷ তাঁদের একমাত্র ছেলের খুব ছোটো থেকেই আকাশ দেখার নেশা৷ বয়স যত বেড়েছে, নেশা ততই বেড়েছে৷ মহাকাশ নিয়ে বই, ইউটিউব চ্যানেল ঘাঁটাঘাঁটি অনেকদিন ধরেই৷ সেই নেশাই শুভেন্দুবাবুদের খোঁজ দিয়েছে শোভন আচার্য নামে দিল্লিবাসী এক সিটিজেন সায়েন্টিস্টের৷ শৌর্যের নেশা দেখে তিনি তাকে ‘দ্য সিটিজেন সায়েন্টিস্ট’ নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে অ্যাড করে নেন৷ ওই গ্রুপে মহাকাশ নিয়ে চর্চা করছেন, গোটা বিশ্বের এমন বহু মানুষ রয়েছেন৷ পরবর্তীতে শৌর্য আইএএসসি নামে নাসার সহকারী একটি বিদেশি সংস্থায় যোগ দেয়৷ আইএএসসি সংস্থার হয়েই মহাকাশে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য গ্রহাণু, নক্ষত্রপুঞ্জ এবং সুপারনোভার অবস্থান চিহ্নিত করার প্রাথমিক কাজ করে সে৷

শৌর্য জানায়,

‘খুব ছোটোতে ছাদে গিয়ে আকাশ দেখতাম৷ তারপর তারাদের ছবি তুলতাম৷ কোন নক্ষত্র কেমন দেখতে, তার আলোর রং কেমন, এসব জানতে খুব ইচ্ছে হয়৷ এখন এসব নিয়ে খানিকটা জেনেছি৷ সেই নেশাই আজ আমাকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছে৷ আমরা মূলত সিটিজেন সায়েন্স প্রোজেক্টে কাজ করি৷ মহাকাশে ছড়িয়ে থাকা গ্রহাণু, নক্ষত্রপুঞ্জ, সুপারনোভাগুলি চিহ্নিত করে আমরা মহাকাশ বিজ্ঞানীদের সাহায্য করি৷ আমি মূলত গ্রহাণু, সুপারনোভা হান্টিং এবং গ্যালাক্সি ক্লাসিফিকেশনের কাজ করি৷ হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে থাকা দুটি বড়ো টেলিস্কোপে তোলা বিভিন্ন মুহূর্তের ছবি আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়৷ সেই ছবি দেখেই আমরা নতুন কিছুর খোঁজ চালাই৷ ইতিমধ্যে আমি নিজে তিনটি নতুন গ্রহাণু শনাক্ত করেছি৷ একটি নতুন সুপারনোভার খোঁজ পেয়েছি৷ আমি বড়ো হয়ে অ্যাস্ট্রোফিজিক্স নিয়ে পড়তে চাই৷’

শুভেন্দুবাবু বলছেন, ‘ছোটো থেকেই আকাশ নিয়ে ছেলের ভীষণ কৌতুহল৷ একটু বড়ো হলে ও মহাকাশ নিয়ে আমাকে অনেক প্রশ্ন করত৷ সেসব প্রশ্নের প্রতিটির উত্তর আমারও জানা নেই৷ কৌতুহল দেখে আমি ওকে মহাকাশ সম্পর্কিত বইপত্র এনে দিতাম৷ মুহূর্তের মধ্যে সেসব বই পড়া হয়ে যেত৷ কোভিডের সময় আকাশের উপর ওর নেশা আরও বাড়ে৷ তখনই শোভন আচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ হয়৷ মালদার ছেলে তিনি৷ বর্তমানে দিল্লিতে রয়েছেন৷ তিনিও শৌর্যের বিষয়ে আগ্রহী হন৷ তখন থেকেই ছেলে শোভনবাবুর গাইডেন্সে কাজ করছে৷ মহাকাশ চর্চা ওর নেশা৷ ক্লাস ফোরে পড়ার সময় নাসা কিডসে পৃথিবীব্যপী অঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল৷ তাতে সফলও হয়৷ পৃথিবীর ১২টির মধ্যে শৌর্যর ছবিও নাসা পাবলিশ করে৷ নাসার একাধিক প্রোজেক্টে শৌর্য কাজ করেছে৷ নাসার তরফে তাকে শংসাপত্রও দেওয়া হয়েছে৷ এখন নাসা, ইসরো সহ পৃথিবীর বড়ো বড়ো মহাকাশ বিজ্ঞানীদের সঙ্গে ছেলে ওয়েবিনারে অংশ নিচ্ছে৷ তবে এখন কল্পনাপ্রবণ হয়েই ও এসব কাজ করে যাচ্ছে৷ বাবা হিসাবে চাই, এই নেশা নিয়েই যেন ও সারাটা জীবন যেন কাটাতে পারে৷ এই নেশাই যেন ওর পেশা হয়ে যায়৷’

আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন